স্লটারগেট! হোয়াইট হাউসের একটি টার্কি নিয়ে আমার অনুসন্ধান

1 year ago 52

English

দণ্ডিত, নাকি বেঁচে গেল? ছবি: শাটারস্টক

ওয়াশিংটন, ডিসিতে শরতের চনমনে এক রৌদ্রোজ্জল দিনে অবশেষে আমি হোয়াইট হাউসে প্রবেশের সাংবাদিক-ব্যাজ হাতে পেলাম।

সাড়া জাগানো ওয়াটারগেট অনুসন্ধানের পঁচিশ বছর পর, এই আমি – ২০০০ সালের নভেম্বরে – নির্বাহী ক্ষমতা ও কেলেঙ্কারির সেই বিখ্যাত জায়গা থেকে রিপোর্ট করার সুযোগ পেলাম – এবং তা-ও ওয়াশিংটন পোস্টের হয়ে।

অবশেষে সম্পাদক আমাকে হোয়াইট হাউসের একটি স্টোরির দায়িত্ব দিতে রাজি হয়েছেন, আর আমি মনে মনে ভাবছি, মাটির নিচে অন্ধকার পার্কিং লটে কোনো এক হুইসেলব্লোয়ারের কাছ থেকে অবৈধ বিমান হামলার ব্যাপারে জানছি, আর সেই দাবির ভিত্তিতে ওভাল অফিসে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের চিফ অব স্টাফকে প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছি।

আমি জানলাম, একটি টার্কির প্রতি প্রেসিডেন্টের এই বার্ষিক “ক্ষমা” প্রদর্শন হল হোয়াইট হাউসের সবচেয়ে অদ্ভুত রীতিগুলোর একটি।

অথচ আমার সম্পাদক সংবাদকক্ষে আমার ধূসর খোপে উঁকি দিয়ে দক্ষিণ ক্যারোলাইনার আঞ্চলিক সুরে বললেন: “শেষ পর্যন্ত আমরা আপনার জন্য সিক্রেট সার্ভিস প্রেস পাসের ব্যবস্থা করেছি – আপনার জন্য এর চেয়ে খুশির আর কী হতে পারে! আমরা চাই আপনি হোয়াইট হাউসের টার্কি নিয়ে রিপোর্ট করুন।”

কী? “টার্কি? মানে মুরগির মত কিছু একটা? নীতিমালা বিষয়ক কোনো স্টোরি নয়?”

পশুবিষয়ক দক্ষিণী প্রবাদ বাক্যের বিশাল ভাণ্ডার থেকে আমার সম্পাদক তখন যা বললেন, তার অর্থ দাঁড়ায়: “নীতিমালা? – দুঃখিত, তেমন কিছু নয়। এটি একটি ছুটির দিনের মজার গল্প – প্রেসিডেন্ট একটি টার্কিকে মুক্তি দিতে যাচ্ছেন। কারণ আপনি জানেন, সারা দেশে থ্যাঙ্কসগিভিং ডিনার শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টার্কিদের বুকে কাঁপন ধরে।”

আলফ্রেড ফ্রেন্ডলি প্রেস ফেলোশিপের আওতায় দ্য পোস্টে কর্মরত নবীন অস্থায়ী প্রতিবেদক হিসেবে আমি জানতাম, সংবাদকক্ষের পদক্রম অনুযায়ী আমার অবস্থান নিচের দিকে। (সত্যি বলতে কী, বার্তাকক্ষে আমার বিটের অঘোষিত নাম ছিল “যেসব স্টোরি স্টাফ রিপোর্টারেরা করতে চান না”, যেখান থেকে এক পর্যায়ে আমেরিকান রোম্যান্স রাইটার্স কনফারেন্সও কভার করা হয়েছিল।) তবে গৃহপালিত পাখির এসাইনমেন্ট, সত্যি বলতে কী, আমাকেও বেশ পীড়া দিয়েছিল।

আমি জানলাম, একটি টার্কির প্রতি প্রেসিডেন্টের এই বার্ষিক “ক্ষমা” প্রদর্শন হল হোয়াইট হাউসের সবচেয়ে অদ্ভুত রীতিগুলোর একটি। বড় আকারের একটি পাখি, সংখ্যায় পাঁচ কোটিরও বেশি, যাদের নিয়তি হল যুক্তরাষ্ট্রের থ্যাংকসগিভিংয়ের ছুটিতে কেটেকুটে ক্র্যানবেরি বা পাম সস সমেত খাবারের পাতে ওঠা

বেশিরভাগ আমেরিকান (তবে সবাই নয়) নভেম্বরের চতুর্থ বৃহস্পতিবার থ্যাঙ্কসগিভিং উদযাপন করেন, যেখানে মূলত ১৬২১ সালের একটি ছোট ঘটনাকে স্মরণ করা হয়। সেই ঘটনায় আদিবাসী ওয়াম্পানোয়াগরা সংগ্রামী পিলগ্রিম অভিবাসীদের পাশে দাঁড়ায় এবং তাদের উদ্দেশ্যে ফসল কাটা উৎসবের আয়োজন করে। (ইতিহাসবিদদের মতে, প্রকৃতপক্ষে ওয়াম্পানোয়াগরা ইংরেজ ঔপনিবেশিকতার শিকার এই অসহায় মানুষগুলোর সামনে হাঁস পরিবেশন করেছিল, কিন্তু পোল্ট্রি শিল্পের প্রতিনিধিরা মার্কিনীদের বুঝিয়েছিল যে, আসলে ঐ দিনটির জন্য আরও মাংসল ও আরও লাভজনক টার্কি পাখিই বেশি যুৎসই।)

এখন সব মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রতি বছর এমন একটি পাখির প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করেন (পাশাপাশি একটি ব্যাক-আপ “ভাইস-টার্কি”)। এই পাখিটি যাচাই বাছাই করে নির্বাচন করা হয় এবং ন্যাশনাল টার্কি ফেডারেশনের সামনে হাজির করা হয়। অবশিষ্ট দিনগুলো পাখিটি কাছাকাছি কোনো পোষা প্রাণীর চিড়িয়াখানায় অক্ষত অবস্থায় দিন কাটায়।

একটি থ্যাঙ্কসগিভিং টার্কি। ছবি: শাটারস্টক

ব্যাকগ্রাউন্ডিং ও স্টোরি-অ্যাঙ্গলিং পর্যায়

তো, আমি ভেবেছিলাম – দু’মাসের মধ্যেই পদ হারাতে যাওয়া এক প্রেসিডেন্টের পাখি-যজ্ঞ দিয়ে হয়ত পোস্টের পাঠকদের জন্য বিনোদনের খোরাক যোগাতে পারব। কিন্তু প্রতিবেদক হিসেবে আমার অতীত অভিজ্ঞতা বলছিল, এই কৌশলও কাজে দেবে না।

অনেক সাংবাদিক, এমনকি কয়েকজন মার্কিন প্রেসিডেন্টও একটি ভুল তথ্য দিয়ে থাকেন যে, ১৯৪৭ সালে প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের মাধ্যমে টার্কি মুক্তির এই বিশেষ প্রচলন শুরু হয়েছে৷ কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, অনুষ্ঠানটি ছিল মূলত উত্তেজিত খামার ব্যবসায়ীদের শান্ত করতে “টার্কি প্রদর্শনের” একটি আয়োজন। পোল্ট্রির ব্যবহার কমাতে সেসময় ট্রুম্যান প্রশাসন একটি প্রচারণা চালাচ্ছিল যেন বৃহস্পতিবার কেউ হাঁস-মুরগী না খায়। কিন্তু থ্যাঙ্কসগিভিংও পড়ে বৃহস্পতিবারে, তাই খামারীরা এ নিয়ে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছিলেন। ৪০ বছরের পুরনো রীতি মেনে তখনও আসলে নির্বাচিত প্রেসিডেন্সিয়াল পাখিগুলোকে হত্যা এবং দ্রুত সাবাড় করা হত (১৯৬৩ সালেই কেবল এর ব্যতিক্রম হয়। সেবার প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি নিহত হওয়ার কয়েকদিন আগে তাঁর সামনে হাজির করা একটি টার্কিকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন।)

তবে আমি রোমাঞ্চিত ছিলাম এটি জানতে পেরে যে, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার একটি বড় বিষয়বস্তু – ইরান-কন্ট্রা কেলেঙ্কারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে টার্কি “ক্ষমার” প্রেসিডেন্সিয়াল রীতি প্রথম চালু হয়। এই কেলেঙ্কারিতে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ইরানের কাছে নিষিদ্ধ অস্ত্র বিক্রির টাকা দিয়ে গোপনে ডানপন্থী বিদ্রোহী দল কন্ট্রাকে অর্থায়নের অভিযোগ ছিল। এই অভিযোগে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের একজন কর্মকর্তা অলিভার নর্থকে ক্ষমার বিষয়টিকে ঘিরে ১৯৮৭ সালে রাজনৈতিক উত্তেজনা শুরু হলে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান “চার্লি” নামের একটি থ্যাঙ্কসগিভিং টার্কিকে মুক্তি দিয়েছিলেন। ইতিহাসবিদদের মতে, এটি দিয়ে আসলে বোঝানো হয়েছিল যে বিশেষ ক্ষমা তেমন বড় কিছু নয়। 

পাখিটিকে মৃত্যু থেকে রেহাই দেওয়াতে আমি কোন দোষ খুঁজে পাইনি: টার্কিটা স্পষ্টতই মোটা এবং সম্ভবত সুস্বাদু ছিল।

রিগ্যানের উত্তরসূরি প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ. ডব্লিউ বুশ টার্কি মুক্তির বিষয়টিকে একটি বাৎসরিক রীতিতে পরিণত করেন। কয়েক বছরের মধ্যে এটি ওয়াশিংটনের প্রতিবেদকদের জন্য এটি একটি বড় অ্যাসাইনমেন্ট হয়ে দাঁড়ায় এবং প্রতি নভেম্বরে হোয়াইট হাউস চত্বরে দলে দলে সাংবাদিকেরা আসতে শুরু করেন। বলতে পারি, বরাবরই পাখির এই আয়োজন ছিল নীতি-টীতির কাঠখোট্টা জগত থেকে বেরিয়ে এক দণ্ড আনন্দ-বিরতি।

তবে ১৯৯০ দশকের শেষের দিকে রিপোর্টাররা অভিযোগ করতেন, এই অনুষ্ঠানগুলো আসলে গুরুত্বহীন অ্যাসাইনমেন্টে রূপ নিয়েছে, যেমনটা আমার সংবাদকক্ষের সহকর্মীরা বলতেন, যে “গৃহপালিত পাখি” বিষয়ক সব রিপোর্টগুলো একঘেঁয়ে হয়ে গেছে।

George HW Bush turkey pardon

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ.ডব্লিউ. বুশ (মাঝে) টার্কির প্রেসিডেন্সিয়াল “ক্ষমার” আয়োজনকে হোয়াইট হাউসের একটি বাৎসরিক আয়োজনে রূপ দিয়েছেন। ছবি: শাটারস্টক

অনুসন্ধানী গবেষণা পর্যায়

হতাশার মধ্যেও আমি পোস্ট পত্রিকার বব উডওয়ার্ড ও কার্ল বার্নস্টেইনের কিংবদন্তি রিপোর্টিং জুটি থেকে অনুপ্রেরণা নিলাম; এবং ঠিক করলাম, আমি এখন সব কিছু ফেলে টার্কি মুক্তি ও তার পেছনের সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুসন্ধান করব।

আমার পাওয়া উন্মুক্ত নথির তথ্য মতে, ক্লিনটনের কাছ থেকে (হত্যা থেকে) ক্ষমার আদেশ পাওয়া নির্বাচিত টার্কিটি ছিল “জেরি” নামের ৪৫ পাউন্ড ওজনের পুরুষ পাখি। কিন্তু বিশদ প্রতিবেদন করাটা কঠিন ছিল। পাখিটিকে যে মৃত্যু থেকে রেহাই দেওয়াতে আমি কোন দোষ খুঁজে পাইনি: টার্কিটা স্পষ্টতই মোটা এবং সম্ভবত সুস্বাদু ছিল; ফেডারেশনেরও জেরিকে বাছাই করার আইনি অধিকার আছে বলে মনে হলো; এবং আমি পশু অধিকার কর্মীদের কাছ থেকে  বাণিজ্যিক খামারে অমানবিক অবস্থার যে প্রমাণ পেয়েছি – বার্তাকক্ষের সহকর্মীদের মতে, সেটি ছুটির দিন মাটি করার জন্য যথেষ্ট ছিল। আমি প্রমাণ পাই যে জেরির ঠোঁট কাটা হয়েছে। অধিকার সংস্থা ইউনাইটেড পোল্ট্রি কনসার্নস এই চর্চার সমালোচনা করলেও ফেডারেশনের দাবি পাখিটির ঠোঁট কাটা হয়েছে মানবিক পদ্ধতিতে; আর আমি এই দাবির বিরোধিতা করার মতো কোনও সোর্স খুঁজে পাইনি। একজন মার্কিন রাষ্ট্রপতির একটি প্রাণীকে ক্ষমা করার আইনগত অধিকার আছে কিনা তা অস্পষ্ট, তবে সামরিক সেবায় অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে কাটাকুটির বোর্ড থেকে তাদের (পাখি) রক্ষার জন্য প্রেসিডেন্টকে তাত্ত্বিক ক্ষমতা প্রদানের আইনটি বেশ শক্তিশালী বলে মনে হলো।

তাই একেবারেই কোনো প্রয়োজনীয় অনুসন্ধানী গবেষণা ছাড়াই আমি বিল ক্লিনটনের রোজ গার্ডেনের টার্কি আয়োজনে যোগ দিয়েছি। বেশ অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।

আমি যতটা ভেবেছিলাম ব্যাপারটা তার চেয়েও খারাপ ছিল। আমি যে প্রেস ব্যাজ পড়ে গর্ববোধ করছিলাম, জেরির গলায়ও ঠিক একই ধরনের সিক্রেট সার্ভিসের অনুমোদিত হোয়াইট হাউস প্রেস ব্যাজ পড়া ছিল।

সোর্স ও অকাট্য প্রমাণ

আমি সেখানে জড়ো হওয়া বেশ কয়েকটি শিশুর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম, যাদের খুব কমই ক্ষমার পক্ষে বলে মনে হয়েছে আর “আমি বরং এটি খেতে চাই” – এমন কথাই কথা বলেছিল – তবে ভয় ছিল, পাছে জবাবদিহিতা নিয়ে আমার এই প্রতিবেদন থেকে এই অংশটি সরিয়ে নেওয়া হয়।

তবে তারপর আমি আয়োজনের প্রধান সরকারি ঠিকাদার তৎকালীন ন্যাশনাল টার্কি ফেডারেশনের চেয়ারম্যান জেরি জেরোমকে খুঁজে পাই, যার সঙ্গে আমি টার্কি নিয়ে কথা বলি।

শেষ পর্যন্ত জেরোমের একটি প্রশ্নে আমার পুরো অনুসন্ধান ফুটে উঠেছে: “হোয়াইট হাউসের আগের টার্কিগুলোর চেয়ে জেরি কি বিশেষ কিছু?”

অবিশ্বাস্যভাবে আমার হাতে একটি ছোট স্কুপ চলে এসেছে: বিল ক্লিনটন যে টার্কিকে মুক্তি দিচ্ছিলেন, সেটিকে খেয়ে ফেলার কোনো আশঙ্কা ছিল না, আর মুক্তি দেয়ারও কোনো প্রয়োজন ছিল না৷

তাঁর অকপট উত্তর আমার অনুসন্ধানকে ফলপ্রসূ করেছে, এবং পোস্টের স্টাইল বিভাগের লোভনীয় প্রথম পাতায় আমার গল্প জায়গা করে নিয়েছে

“এটি কেবল খাদক নয়, বরং একটি উৎপাদক পাখি, তাই কোনোভাবেই এটিকে হত্যা করা হতো না,” বলে জেরোমি ব্যাখ্যা করেছেন, “আসলে, এটি কোনো সাধারণ বাণিজ্যিক টার্কি নয়, বরং প্রজননে সক্ষম খুব ছোট সংখ্যালঘু প্রজাতির একটি পুরুষ পাখি।”

এই ভয়াবহ অন্যায় নিয়ে আওয়াজ তুলুন!

আনন্দে দিশেহারা এক নবীন রিপোর্টার হিসেবে আমার বুঝতে বাকি ছিল না যে অবিশ্বাস্যভাবে আমার হাতে একটি ছোট স্কুপ চলে এসেছে: বিল ক্লিনটন যে টার্কিকে মুক্তি দিচ্ছিলেন, সত্যি কথা বলতে কী, সেটিকে খেয়ে ফেলার কোনো আশঙ্কা ছিল না, আর মুক্তি দেয়ারও কোনো প্রয়োজন ছিল না৷ এর চেয়েও বড় কথা: বিজয়ের আনন্দেও আমি বুঝতে পারছিলাম, জেরি আলাদা কারণে সাধারণ ক্ষমার যোগ্য এবং ঐ বিশেষ দিনে অন্য কোনো বেনামী টার্কি তার বদলে রান্না হওয়ার দুর্ভাগ্য থেকে রেহাই পেতে পারতো।

আমার গল্পে উঠে এসেছে: “এটি ছিল, এক কথায় প্রহসনের পর প্রহসন… স্লটারগেট (পাখিহত্যা কেলেঙ্কারি)!”

থ্যাঙ্কসগিভিং উপলক্ষে ছুরির নিচে পড়ার কোনো আশঙ্কা জেরির নেই, বিষয়টি স্বীকার করতে গিয়ে “ক্ষতির দিকটি দেখভালের দায়িত্বে” থাকা ফেডারেশনের অন্য এক কর্মকর্তা জোর দিয়ে বলেছেন, পাখিটিকে হয়ত শেষ পর্যন্ত ছুরির নিচে পড়তেই হতো।

“অন্ধকারে গণতন্ত্র বাঁচে না” স্লোগান সামনে রেখে চলা ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার এই চূড়ান্ত স্টোরি। ছবি: স্ক্রিনশট

হোয়াইট হাউসের অস্বীকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা

পাখি নিয়ে আমার সাড়াজাগানো স্টোরিটি ক্লিনটনের হোয়াইট হাউসে একটি বার্তা দিয়েছে, যা গণমাধ্যম দপ্তর অপ্রত্যাশিতভাবে নাকচ করেছে। এমনকি একজন কর্মকর্তা জোর দিয়ে আমাকে বলেছেন, এটি যদি সত্যি হয় যে জেরি বিশেষ-মুক্তির যোগ্য ছিল না, তবে প্রশাসনের কেউই, অন্তত প্রেসিডেন্ট, এ ব্যাপারে জানতেন না। (লুকোনোর এই প্রবণতাই বিপদ ডেকে আনে।)

টার্কির বিশেষ ক্ষমার অযথার্থতা নিয়ে আমার উন্মোচনকে প্রেসিডেন্টের বিদায় ঘন্টা বাজানো বিখ্যাত ওয়াটারগেট অনুসন্ধানী ধারাবাহিকের কাতারে ফেলা হয়ত কিছুটা অতিরঞ্জিত হয়ে যায়।

সম্পাদক আমার লেখার একটি অনুচ্ছেদকে “ওয়াশিংটন পোস্টের ইতিহাসে লেখা সবচেয়ে বাজে কৌতুক” বলে আখ্যা দিয়েছেন।

তবে আমার সম্পাদকদের খুশি করতে এই উদ্ঘাটন সম্প্রতি হোয়াইট হাউস শিক্ষানবীশের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের দায়ে অভিসংশনের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া বিল ক্লিনটন সম্পর্কে নতুন হাস্যরসের ভাণ্ডার হাজির করেছে। আর তাই আমরা আনন্দের সঙ্গে দ্ব্যর্থবোধক কথা জুড়ে দিয়েছি।

যেমন, টার্কি ও প্রেসিডেন্টের তুলনা করতে গিয়ে এই স্টোরিতে আলোচনা করা হয়েছে – কীভাবে “অবিশ্বাস্যভাবে সব বাধা পেরিয়ে অন্ধকার থেকে উঠে এসে দুটি ঘটনা যুগপৎভাবে হোয়াইট হাউস কেন্দ্রিক আলোচনার মূল বিষয় হয়ে উঠল।”

আর কি চাই, এই অভিজ্ঞতা থেকে আমি শিখেছি, ওয়াচডগ সাংবাদিকদের অনুসন্ধানের জন্য সরকার সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ই তুচ্ছ নয়।

অগভীর অনুসন্ধানের জন্য পোস্টের যে জ্যেষ্ঠ সম্পাদক আমাকে তিরস্কার করেছিলেন, তিনিই আমার খসড়া মুদ্রণের জন্য চূড়ান্ত করেছেন, এর চেয়ে গর্বের আর কি হতে পারে!

আমি যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম আর নিজ দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সাংবাদিকতা ভিসায় পোস্টে কাজ করছি জেনে সম্পাদক আমার লেখার একটি অনুচ্ছেদকে “ওয়াশিংটন পোস্টের ইতিহাসে লেখা সবচেয়ে বাজে কৌতুক” বলে আখ্যা দিয়েছেন। শুকনো হাসিতে দিনি বলেছিলেন, এমন কৌতুকের জন্য আমাকে হয়ত দেশ ছাড়তে হবে।

শেষের এই অনুচ্ছেদ:

“একটি বড়সড় টার্কি – মৃত্যুর খাঁড়া, যার মাথার ওপর ঝুলছে…  ৪৫ পাউন্ডেরও বেশি, ঠাসা খাওয়ার মত বেল্টসভিল হোয়াইট, সামনের দিকে একটি বড় ও স্পষ্ট নরম বুকের মাংস। ওহ, হ্যাঁ: প্রমাণ হিসেবে একেবারেই অকাট্য – সত্যিকারের পোল্ট পয়েন্ট ফোর ফাইভ (আগ্নেয়াস্ত্র কোল্ট পয়েন্ট ফোর ফাইভের মতই দুর্দান্ত)। অপরাধ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত।

যাই হোক, তিনি অনুচ্ছেদটি প্রকাশ করেছেন।


Rowan Philp, Senior Reporter, GIJN

রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমস পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক ছিলেন। বিদেশ প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বের ২৪টির বেশি দেশে সংবাদ, রাজনীতি, দুর্নীতি ও সংঘাত নিয়ে রিপোর্ট করেছেন।

The post স্লটারগেট! হোয়াইট হাউসের একটি টার্কি নিয়ে আমার অনুসন্ধান appeared first on Global Investigative Journalism Network.

Read Entire Article